আজকের আমরা জানবো এমন একজন ব্যক্তির কথা, যিনি নিজের একক প্রচেষ্টায় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক নতুন যুদ্ধের সূচনা করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে দেখিয়েছেন কীভাবে অর্থনৈতিক শক্তি সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তার উদ্যোগে পরিবর্তিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন।
তিনি হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ। তার চিন্তাভাবনা, তার কর্মপ্রবাহ, এবং তার অর্জনগুলো আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। আজকের এই ভিডিওতে আমরা ডুব দেবো তার জীবনকাহিনীর গভীরে এবং জানবো কিভাবে এক সাধারন মানুষ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
চলুন, শুরু করি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন এবং তার অনন্য অবদানের এই অনন্য যাত্রা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের এক সাধারণ পরিবারে। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটি ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের দরিদ্র মানুষের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির পথপ্রদর্শক হবেন, তা কেউই তখন কল্পনা করতে পারেনি।
চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা ড. ইউনূস তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন স্থানীয় স্কুল এবং কলে

জে। পরবর্তীতে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এই ডিগ্রির মাধ্যমেই তার গবেষণা এবং চিন্তাধারার জগতে প্রবেশ ঘটে।
ড. ইউনূসের গবেষণা এবং পড়াশোনার মূলে ছিলো একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গভীর প্রশ্ন—কীভাবে অর্থনীতি এবং ব্যাংকিংকে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়।
১৯৭৪ সালে, যখন বাংলাদেশ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন। সেই সময় তিনি নিজে গ্রামে গিয়ে দেখলেন কীভাবে অর্থের অভাবে মানুষ অসহায়ভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। এখান থেকেই তার মনে হলো, যদি এই দরিদ্র মানুষগুলোকে সামান্য মূলধন দিয়ে সাহায্য করা যায়, তারা হয়তো নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে পারবে।
এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ। ক্ষুদ্রঋণের মূলনীতি খুবই সরল—দারিদ্র্যের মধ্যে আটকে থাকা মানুষদের জন্য ঋণ প্রদান, যা সাধারণ ব্যাংকগুলোর কাছে অবাস্তব মনে হতে পারে। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক, যা দরিদ্র মানুষদের ঋণ দিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এই মডেলটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সহায়তা করে।
এই অসামান্য অবদানের জন্য, ২০০৬ সালে ড. ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।
ড. ইউনূস কেবলমাত্র একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেননি; তিনি একটি নতুন ধরনের চিন্তা-ভাবনার জন্ম দিয়েছেন, যেখানে ব্যবসা এবং সামাজিক উন্নয়ন পাশাপাশি এগিয়ে যেতে পারে। সামাজিক ব্যবসার ধারণা তার একটি অন্যতম উদ্ভাবন, যা আজও বিশ্বজুড়ে সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ড. ইউনূসের জীবন কেবলমাত্র একটি ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি এক অবিশ্বাস্য মানবতার গল্প। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তরুণদের জন্য একটি শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।