বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি “অবতীর্ণ” হতে পারবেন না এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর, এই ঘোষণা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আসার পর থেকে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে।
বর্তমানে ফেসবুকে বিসিএস শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতি অনেকে সমর্থন জানাচ্ছেন, আবার অনেকে বিরোধিতা করছেন।
তিনবার অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এখানে ‘অবতীর্ণ’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ কী। যদি এর অর্থ হয় যে একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, তাহলে যারা ইতিমধ্যে তিনবার পরীক্ষা দিয়েছেন, তারা কীভাবে নতুন নিয়মের আওতায় আরও পরীক্ষা দিতে পারবেন?
এছাড়া, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সংখ্যা সীমিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত ও আন্দোলনকারীদের হতাশা
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যেখানে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর আওতায় নতুন বিধি সংযোজনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিসিএস-এর সকল ক্যাডারে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর হবে। তবে স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করছেন, চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক এবং আটবার বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হোক।
এদিকে, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বদলানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
ইতোমধ্যে তিনবার বিসিএস দেয়া প্রার্থীদের কি হবে?
এখন প্রশ্ন উঠেছে, যারা ইতোমধ্যে তিনবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের জন্য নতুন নিয়মটি কিভাবে কার্যকর হবে? এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেছেন, সরকারী সার্কুলারে অস্পষ্টতা থাকলে পরে ব্যাখ্যা দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, “প্রজ্ঞাপনের পর নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। যারা ইতোমধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।”
এছাড়া, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হলে তরুণদের মেধাকে কাজে লাগানো যাবে না।
পুরনো সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স আগে ৩০ বছর ছিল এবং অবসরের বয়স ৫৯ বছর। তবে ১৯৯১ সালে এটি ৩০ বছর করা হয়। তারপর ২০১১ সালে অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়।
সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলন অতীতে বেশ কিছুবার বয়সসীমা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। ২০১৯ সালেও এই বয়স বাড়ানোর বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “যদি ৩৫ বছর করা হয়, তাহলে সরকারকে কাদের দিয়ে চালাবো।”