এলএনজি ব্যবসার চক্রে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব, নেপথ্যে নসরুল হামিদ

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খোলাবাজার থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি চক্রে কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে মূলত চারটি কোম্পানি। এই চারটির মধ্যে দুটি কোম্পানি এখনো কাজ পাচ্ছে, যদিও সরকার পরিবর্তন হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই এলএনজি চক্রের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, গত ছয় অর্থবছরে সরকার ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করেছে, যার মধ্যে গত অর্থবছরে ৪২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। এরপরে ২০২০ সালে বেসরকারি পর্যায়ে খোলাবাজার থেকেও আমদানি শুরু হয়, যেখানে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া, গানভর, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জিস ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকসিলারেট এনার্জি বেশি কাজ পেয়ে থাকে। জানা গেছে, এই চারটি কোম্পানির মধ্যে ভিটল এশিয়া ও গানভরের সঙ্গে নসরুল হামিদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ব্যবসায়িক সংযোগ রয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভিটল এশিয়া কোনো কাজ পায়নি। তবে অক্টোবরে টোটাল ও গানভর চারটি এলএনজি কার্গো সরবরাহের চুক্তি পেয়েছে।

বিতর্কিত কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক শাস্তি

ভিটল এশিয়া, গানভর ও টোটাল বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি পেয়েছে। ২০২০ সালে ভিটলকে ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে জরিমানা করা হয়। ইকুয়েডরে ঘুষের দায়ে গানভরকেও গত মার্চে ৬৬ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়।

বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি কার্যক্রমে সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলার সাথে জড়িত স্থানীয় প্রতিনিধি এজাজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ভিটল এশিয়ার সাথে কাজ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্দেশনায় তিনি এলএনজি ব্যবসার সাথে যুক্ত হন।

প্রভাবশালী সম্পর্কের সহায়তায় কাজের বরাদ্দ

খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি থাকলেও বেশিরভাগ কোম্পানি দরপত্রে অংশ নেয়নি, কারণ দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। খোলাবাজার থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪টি এলএনজি কার্গো কেনা হয়েছে, যার মধ্যে ভিটল একাই সরবরাহ করেছে ৩০টি এবং গানভর ও টোটাল যথাক্রমে ১৫ ও ১৪টি।

ক্ষমতার বণ্টনে চক্রের প্রভাব

নসরুল হামিদের পারিবারিক ব্যবসায়িক সংস্থার সঙ্গে ভিটল এশিয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ঢাকায় পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানি নসরুল হামিদের মামা কামরুজ্জামান চৌধুরী এবং ভারতীয় নাগরিক নাবিল খানের যৌথ অংশীদারত্বে নিবন্ধিত হয়েছে, যা এলপিজি ও এলএনজি সরবরাহের সাথে জড়িত।

নতুন সরকারের পুরোনো তালিকা ব্যবহার

এলএনজি কিনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোনো ২৩টি কোম্পানির তালিকা পুনঃঅনুমোদন করেছে। দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইনের অধীনে এই তালিকা অনুমোদন পেয়েছিল, যা বিশেষ ক্ষমতা আইনে কার্যকর ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশেষ আইনটি সরকারের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা বন্ধ করেছে, ফলে তালিকায় থাকা অনেক কোম্পানি কাজের অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞের মন্তব্য ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, জাতীয় স্বার্থে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান করে আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল। তাদের মতে, একটি শক্তিশালী চক্র কাজ করে যাচ্ছে, যা ক্ষমতার রদবদলেও সুবিধা পাচ্ছে।

Author

  • Md Shohanuzzaman

    Md. Shohanuzzaman Author & Developer at News Orchid 24With a passion for delivering accurate news and insights, Md. Shohanuzzaman is the driving force behind News Orchid 24. As both an author and developer, Shohanuzzaman is dedicated to creating a user-friendly, informative platform where readers can stay updated on key events and trends. His expertise combines content creation with technical proficiency, ensuring News Orchid 24 maintains its commitment to quality and accessibility.

    View all posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *