আবাসন, বাংলোবাড়ি, রিসোর্ট—সবই আছে অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেলের

পেশায় তিনি পুলিশ কর্মকর্তা, বর্তমানে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি)। তবে তাঁর সম্পদ শুধু চাকরির আয়েই সীমাবদ্ধ নয়। রাজধানীর আশপাশে গড়ে তুলেছেন বিশাল আবাসন প্রকল্প, বাংলোবাড়ি, ওষুধ কারখানা, এমনকি মেঘনা নদীর মাঝে একটি রিসোর্ট। ২৬ বছরের পুলিশি চাকরিতে এই বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন গাজী মোজাম্মেল হক।

আবাসন ব্যবসার গল্প

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১২০০ বিঘা জমির ওপর ‘আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন মোজাম্মেল। পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই প্রকল্প ২০০৭ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। তবে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই প্রকল্পের সঙ্গে পুলিশের কোনো আনুষ্ঠানিক যোগসূত্র নেই।

সূত্র মতে, প্রকল্পের নামের সঙ্গে ‘পুলিশ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য। এ প্রকল্পে জমি নিয়ে পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

জমি দখল ও প্রতারণার অভিযোগ

রূপগঞ্জে জমি দখল ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমি বিক্রিতে বাধ্য করা এবং চাষাবাদ করতে না দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মিঠু সরকার নামে একজন জানান, তাঁর বাবার জমি বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করে রেখেছেন মোজাম্মেল।

২০১৯ সালে রিমান্ডে নিয়ে জমি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী জাহের আলী। তিনি জানান, রিমান্ডে হত্যার হুমকি দিয়ে ৬২ বিঘা জমি লিখিয়ে নেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে সমঝোতার মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়।

বাড়ি ও রিসোর্ট

১২ বিঘা জমির ওপর দোতলা বাংলোবাড়ি গড়েছেন মোজাম্মেল। এর পাশাপাশি কুমিল্লার মেঘনা নদীর মাঝে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে তৈরি করেছেন রিসোর্ট। রিসোর্টটির চারপাশে পুকুর, ফল ও সবজির চাষ, অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মঞ্চসহ নানা সুবিধা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রিসোর্ট তৈরিতে খাসজমি দখল করা হয়েছে।

মোজাম্মেল অবশ্য দাবি করেছেন, এটি রিসোর্ট নয়, বরং এটি মাছের খামার এবং ফল-ফসলের চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

টিআইবির মতামত

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশের বৈধ আয় দিয়ে এত সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।”

Author

  • Anik Paul

    Hi, I’m Anik Paul, an engineering student and part of the team at News Orchid. We’re committed to delivering timely and accurate news across various fields to keep you informed and connected with current events that matter.

    View all posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *