ময়মনসিংহ নগরীর এক সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণের পর থেকে গ্যাস নির্গমন অব্যাহত থাকায় এলাকাটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বিরাজ করছে। ফলে, জেলা প্রশাসন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সিএনজি স্টেশনটির ৫০০ মিটারের মধ্যে যানবাহন ও মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে।
গতকাল সোমবার রাত ১১টায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মুফিদুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য ৪ নভেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৫০০ মিটারের মধ্যে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল গতকাল বিকেল ৩টার দিকে, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের রহমতপুর বাইপাস এলাকায় অবস্থিত আজহার ফিলিং স্টেশনে। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্যাস দেওয়ার সময় লিকেজ থেকে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাতটি যানবাহন—একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট টানা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ময়মনসিংহের উপসহকারী পরিচালক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে সিএনজি লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুড়ে যাওয়া একটি প্রাইভেট কার থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন প্রাইভেট কারচালক মো. হিমেল (২৬), ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বাসিন্দা, এবং রহমতপুরের আবদুল কুদ্দুস (৮৫), যিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান। এ ঘটনায় গুরুতর আহত আরও পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সফিকুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন্নাহার নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিন:
ময়মনসিংহ নগরের সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। গুরুতর আহত তোফাজ্জল হোসেন (৪৫) ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। তোফাজ্জলের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নিজকল্পা গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আবুল হোসেন (৪৫), চা দোকানি আব্দুল মালেক (৫০), মো. কামরুল (৩২), ও তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার (৩০)। এ ছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সিএনজি অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম (৩৫) ও আনোয়ার হোসেন (২৫)।
ওসি শফিকুল ইসলাম খান আরও জানান, এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত রয়েছেন।