দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি ঘটছে। ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা পরিস্থিতির তীব্রতাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১,২৪৩ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৯৭ জনে, আর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬১,৮১৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৪,০৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন ১,৯৬০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছেন ২,০৮৪ জন। এ তথ্য পরিস্থিতির সংকটময় অবস্থাকে নির্দেশ করে এবং দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে আনে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার প্রকোপ কমানো, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, এবং মানুষকে সচেতন করা জরুরি। এই রোগের বাহক এডিস মশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে উচ্চমাত্রার জ্বর, চোখের পেছনে তীব্র ব্যথা, পেশি ও জয়েন্টের ব্যথা, ত্বকে র্যাশ, বমি ভাব ও বদহজমের মতো লক্ষণ দেখা যায়। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রচুর পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, যা সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করবে:
- পানির স্টোরেজ: পানি যেন কোনো পাত্রে জমে না থাকে তা নিশ্চিত করুন। খালি পাত্রে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজননস্থল হতে পারে।
- মশারি ব্যবহার: ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। এটি মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
- মশার প্রজননস্থল ধ্বংস: বাড়ির চারপাশে পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টব বা কন্টেইনারে জমে থাকা পানি নিয়মিত ফেলে দিন।
- মশা নিধনকারী ওষুধ: ঘরের চারপাশে ও আশেপাশে মশা নিধনকারী স্প্রে ব্যবহার করুন।
- সম্পূর্ণ হাত-পা ঢাকা পোশাক: বাইরে বের হলে পুরো হাত ও পা ঢাকা পোশাক পরুন, যাতে মশার কামড়ের ঝুঁকি কমে।

সরকারের উদ্যোগ ও সুরক্ষার প্রচেষ্টা
সরকার ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এডিস মশা নির্মূলের জন্য ফগিং কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা মশা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সতর্কতা অবলম্বন ও সুরক্ষা
ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করা সকলের জন্য আবশ্যক। পরিবারের সদস্য ও আশেপাশের মানুষকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করুন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করুন। নিজের সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের কাজগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিদিনের কাজে সতর্কতা অবলম্বন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া উপায় নেই। সতর্ক থাকার মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি।